— ” আমার একটা কথাও তুই শুনিস না আজকাল । কিসের এত ব্যস্ত থাকিস যে ঠিক করে আমার সঙ্গে দুটো কথা বলার সময় পাস না ? গত পাঁচ দিন ধরে লক্ষ্য করছি , তুই যেন কিছু লুকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে ! সত্যি করে বলতো , অন্য কাউকে ভালো লেগে গেছে বুঝি ?! “
— ” হুস , তুই চুপ কর । তোদের মেয়েদের আর কোনো কাজ-বাজ নেই । সারাক্ষণ শুধু একটা ছেলেকে সন্দেহ আর সন্দেহ । আদৌ কোনোদিন ভালোবেসেছিলি আমায় ? “
— ” হ্যাঁ , এখন তো বলবিই এইকথা । তুই-ই তো আমার পিছনে ঘুরঘুর করতিস । তোকে পাত্তা দিতাম না ; তা সত্ত্বেও তুই আমার পিছন ছেড়েছিলি ? ছাড়িস নি । তার ওপর অবনী-দা , বাবাই-দা , টুবলু-দা — এরা যখন এদের ভালোবাসার কথা বলতে আসতো , তুই পরে তোর দলবল নিয়ে গিয়ে ওদের অবস্থা টাইট করে দিয়ে আসতিস যাতে ওরা আর আমার পিছনে না পড়ে । কেন , এইসব করার বেলা মনে ছিল না ?? “
— ” পাগল নাকি তুই ? ওরা তোকে ডিস্টার্ব করতো আর আমি ‘as a gentleman’ তোকে ওদের থেকে রক্ষা করতে যেতাম , বুঝলি ! “
— ” ওরে আমার জেন্টেলম্যান’ রে ! As a gentleman , আমাকে ওদের থেকে বাঁচানো আর একইসাথে ওপাড়ার তনু-দি , ক্লাস টুয়েলভ-এর রিম্পা , তোর থেকে দু বছরের বড়ো পৃথা-দি —- এদেরকে লাইন মারার বেলা মনে থাকে না , না ! “
— ” আরেহ ছি ছি ! এসব কি কথা বার্তা ? ওদের আমি সবসময়ই দিদি বা বোনের নজরে দেখে এসেছি । রাম-রাম ! তুই এত ভুলভাল ভাবিস কেন ? “
— ” হ্যাঁ রে , আমি তো ভুলভাল ভাবি । তাই জন্যে তোর কোটের পকেট থেকে সেবার পৃথা দি-কে ডেডিকেট করে লেখা লাভ লেটারটা খুঁজে পেলাম , যেটাতে পরে কি এক্সকিউজ দিলি যে , ওটাতে নাকি আমার নাম লিখতে গিয়ে ভুল করে পৃথা দি-র নাম লিখে দিয়েছিস । তোদের তো পেটে পেটে শয়তানি । “
— ” এখন তো বলবিই ওই সব । মনে আছে তোকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলাম , সারাজীবন আমায় ভালবাসবি তো ? তখন তো যৌবনের প্রারম্ভ , খুব মেতে উঠেছিলি । কত কথা … আহহা ! “
— ” এই …. এই । একদম মিথ্যে কথা বলবিনা । কি শয়তান রে তুই ! একবারও তুই এইভাবে কথা বলিস নি । তখন তো আমার সঙ্গে কথা বলতে গেলে যেন সারা রাজ্যের লজ্জা এসে তোর মুখে লুকিয়ে পড়তো । এসব ঢঙের কথা বলতে আসবি না আমায় , বুঝেছিস ! “
— ” মোটেও না , আমি ছিলাম পুরুষসিংহ । নিজের মুখে সব কথা বলতে হয় নাকি সব সময় ! মেয়েদেরও মাঝে মাঝে কিছু বুঝে নিতে হয় । তবেই না ‘পতিব্রতা সতি’ হতে পারবে । “
— ” হ্যাঁরে , আমরাই সারাজীবন ‘পতিব্রতা সতি’ হয়ে থাকি আর তোরা রিম্পা-দি , ঝিনুক-দি এদের পিছনে পড়ে থাক ; তাই তো ! “
— ” ছিঃ ছিঃ ! আমাদের কথার মধ্যিখানে আবার দিদিদের নিয়ে কেন টানাটানি ? ওরা দিদি হয় , বয়সে বড় , তাই …. “
” ………তাই ওদের লাইন মারাই যায় , কি বলিস ! “
— ” ছ্যা ছ্যা , এসব আমি ঘূণাক্ষরেও ভাবি না । তোর মতন এক সুন্দরী রমনী থাকতে অন্য কোনো মেয়ের দিকে আমি চোখ তুলেও তাকাই না । “
— ” তা বলছি , এটা তোর কত নম্বর ঢপ হলো ? “
— ” ঢপ ! কি যা তা বলছিস ? আমি কি কোনোদিনও তোর থেকে কিছু লুকিয়েছি ? “
— ” না না , কিচ্ছু লুকোস নি । সে জন্যেই তো গতমাসে তোর প্যান্টের গোপন পকেট থেকে ‘classic’ এর একখানা গোটা নতুন প্যাকেট বের করলাম । কি বললি , সেটা নাকি তোর অফিসের কলিগ ভুল করে তোর পকেটে ফেলে দিয়েছে ! “
— ” হ্যাঁ …. না মানে …. সে তো দিয়েছেই । ভুল করে করে ফেলেছিল বেচারা ….. “
— ” আচ্ছা , এক কাজ কর । তোর ওই কলিগের নাম্বারটা দে । আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করি যে এরকম ভুল সে আর কত জনের সঙ্গে করেছে ! “
— ” আরে বাবা , ছাড় না । এত দিনের পুরনো কথা সে কি আর মনে রাখবে ? ! “
— ” এমন কিছু বেশিদিন হয়নি কিন্তু , তুই চাইলেই আমি …… “
— ” না না , ছাড় না এসব কথা । পুরনো চাল ভাতে বাড়ে , পুরনো কথায় তর্ক বাড়ে । ওসব বাদ দে , তুই বল সামনে তো পুজো আসছে , শপিং-টপিং করতে বের হবি না নাকি ?! “
— ” বলিস কি রে ? তুই এই প্রশ্ন আমায় জিজ্ঞেস করছিস ? ওদিকে তোর রিম্পা-দি …… “
— ” তোর কি মুখে আর কোন কথা নেই এসব ছাড়া ? এত সন্দেহ করিস আমায় তুই ?! “
— ” না করে উপায় কি বল ! কাল রাতেই তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড শান্তনু চ্যাটার্জির সঙ্গে কথা বলছিলি আর জিজ্ঞেস করছিলি তোদের কলেজের এককালের সবচেয়ে সুন্দরী সেই অম্বিকা সেনগুপ্তের সঙ্গে আর যোগাযোগ আছে কিনা তার ?! তুইও নাকি বড্ড মিস করিস তাকে আজকাল । “
— ” ইয়ে মানে তোকে এসব কে বললো ? জানতাম … জানতাম ….. আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবেই । বিশ্বাস কর তুই , আমি …. “
— ” কাল যখন তোর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলিস ড্রইং রুমে বসে , আমি সেই অন্ধকারে আগে থেকেই সোফায় শুয়ে ছিলাম , তুই লক্ষ্য করিস নি । কিন্তু তোর কথা আমি সব শুনেছি স্পষ্ট , একেবারে আমার এই কান দিয়ে । “
— ” শেষপর্যন্ত তুইও না সন্দেহ করছিস ? তুই লুকিয়ে লুকিয়ে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিলি আমার ওপর ? এ যেন আমি ভাবতে পারছি না …. শেষ পর্যন্ত ঘর শত্রু বিভীষণ !? “
— ” আর বেশি ভাবিস না , কারণ বেশি ভাবতে চেষ্টা করলে এবার আমি লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দেব । বুঝতে পেরেছিস ! “
— ” হায় হায় , এ যে দেখি সর্ষের মধ্যে ভূত ! এবার আমার কি হবে গো ! বলি ও গিন্নি , তোমার এই বুড়ো কত্তাটাকে একটুও ভালোবাসো না , তাই না ! এ বুড়ো বয়সে আমি কোথায় যাবো গো ! ভাবছি বড়ো খোকাকে ফোন করে কাল-ই আমেরিকায় পাড়ি দেব আর নয়তো ছোটো খোকাকে ফোন করে মাদ্রাজ । “
— ” তারচেয়ে বরং মেজো মেয়ের বাড়ি চন্দননগর চলে যা কিংবা ছোটো মেয়েকে ফোন করে বল শান্তিনিকেতন থেকে তোকে নিতে আসতে । তারপর বাড়িতে আমি কয়েকটা দিন না হয় একটু শান্তিতে ঘুমাবো । “
— ” একি বললে গিন্নি ! আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে ? তোমার কষ্ট হবে না , না ! সে তুমি যাই বলো , As a gentleman আমি তোমাকে সারা জীবন আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম , আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো । “
— ” এই বুড়ো , আগে এটা বল সিগারেট না খাওয়ার প্রতিজ্ঞাটা কবে থেকে শুরু করবি ? হতভাগা , তুই এখনো সিগারেট ছাড়তে পারিসনি , তুই নাকি আবার নিজের দায়িত্ব পালন করবি ! বলি ঢং হচ্ছে , অ্যা ! বুড়ো বয়সে ভীমরতি । “
— ” এতটা নিষ্ঠুর তুমি হতে পারবে প্রিয়ে !? তুমিতো আমার জানের জান , পরানের পরান ; হিয়ার মাঝে কেবল তোমারই স্থান । জানি আমি , তুমি আমায় খুবই ভালোবাসো , কিন্তু কোনোদিনও বলো না কেন গো ?! “
— ” তোকে আমি ভালোবাসি ? এটা কে বললো ? অন্য কেউ আছে আমার ভালোবাসার । “
— ” বলিস কি ? আমাকে ছেড়ে দিবি তুই ! “
— ” না দিয়ে উপায় কি বল ! কোনোদিন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তারিখ মনে রেখেছিস ? রাখিস নি । আমার জন্মদিনটা তো ভুলেই গিয়েছিস । সে না হয় বাদ দিলাম , কিন্তু না , আর সহ্য হচ্ছে না । “
— ” বেশ বেশ ! আমিও ভাবছিলাম কয়েকদিন ধরে তোকে কথাটা বলবো কিন্তু কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না …. “
— ” কি কথা ?! “
— ” এই যে , আমার প্রাক্তন প্রেমিকা ফিরে এসেছে আর আমি ওকে বিয়ে করতে চাই । তবে তার জন্য আগে তোর থেকে ডিভোর্স নিতে হবে , কিন্তু তুই রাজি হবি না হয়তো ; তাই আগেভাগে এমন কিছু করছিলাম যাতে নিজে থেকেই তুই এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিস আর আমিও তোর থেকে মুক্তি পাই । “
— ” বাহ্ , এইতো তুই জেন্টেলম্যান , তাই না ! বুঝলাম… বুঝলাম… তোদের ভালোবাসা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্পূরের মতো উবে যায় । বেশ এতদিন তোর খেয়াল রেখেছিলাম , ভালোবেসেছিলাম , কিন্তু তুই তো ………. আচ্ছা বাদ দে । কিছু কি বলবি তুই আর ? “
— ” উমম , এটাই বলার যে ডিভোর্স পেপার রেডি , আমার সই করা হয়ে গেছে । কাল সকালে শেষবারের মতো না হয় তোর সঙ্গে আমার দেখা হবে । তোকে দেওয়া পছন্দের শাড়িখানা পড়ে নিস , ভালো লাগে তোকে । “
— ” সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না । ডিভোর্স চেয়েছিস , কাল-ই না হয় তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো । তোর পছন্দের মাটন বিরিয়ানি করেছিলাম , ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি , খেয়ে নিস । আমার খিদে নেই , আমি শুতে চললাম । তার ওপর আবার প্যাকিং করতে হবে জামাকাপড়ের । সবকিছু নেব না রে , কয়েকটা শাড়ি-ই যথেষ্ট আমার জন্য । ভাবছি বড়ো মেয়ের বাড়ি চলে যাবো , সেখান থেকে না হয় দেখা যাক কোথায় যাই । তুই খেয়াল রাখিস নিজের , বুঝলি ! গুড নাইট । “
— ” হুমম , শুভ রাত্রি । “
[ পরদিন সকাল বেলায় দুজনের দেখা হয় বাড়ির সামনের সেই ছোট্ট বাগানটাতে , যেটা একসময় দুজনে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলো ।
একজনের পরনে নীল রঙের একখানা শাড়ি , যেটা তার ভালোবাসার মানুষটা তার জন্মদিনে তাকে উপহার দিয়েছিলো ।
আর তার উল্টো দিকের মানুষটা ! সে ততক্ষণে একখানা হাত পিছনে রেখে এক পা , এক পা করে এগিয়ে আসে তার জীবন সঙ্গিনীর দিকে ।
জল টলমল চোখে বৃদ্ধা তাকান তার এতো বছর ধরে প্রত্যেকটা হাসি-কান্নার মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকা মানুষটার দিকে । তাকিয়ে দেখেন মানুষটার ঠোঁটে স্মিত হাসি ।
তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধানটা আর মাত্র দুই হাত । বৃদ্ধা ভয়ে চোখ বুঝে নেন । এই কঠিন বাস্তব যে উনি সহ্য করতে পারবেন না । এরকম চিন্তা ভাবনা তো তার মাথাতেই আসেনি কোনোদিন । এরকম কিছু ঘটতে পারে এটা তিনি আঁচ-ই করতে পারেননি ।
বৃদ্ধ চুপচাপ তাকিয়ে থাকেন তার পঁয়ষট্টি বছরের এই সুন্দরী জীবন সঙ্গিনীর দিকে । নীল রঙের শাড়িতে বড্ড মানাচ্ছে তাকে । চোখ ফেরানো যাচ্ছে না । এই বুড়ো বয়সে যেনো তিনি নতুন করে প্রেমে পড়ছেন । পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ তাঁর মনের মানুষটির দিকে ।
বৃদ্ধার চোখ বুজে গিয়েছে । তিনি চিন্তা করছেন , কখন তার ভালোবাসার মানুষটা তার সঙ্গে সম্পর্কের শেষ চিহ্নটা বের করে দেবে ! বুকটা ভয়ে ঢিপঢিপ করছে ।
বৃদ্ধ আলতো হাসলেন , তারপর পিছনে রাখা হাতখানা সামনে আনলেন । হাতে ধরা একখানা লাল রঙের গোলাপ ।
এই গোলাপ তার আর তার ভালোবাসার মানুষের অদ্ভুত এক বন্ধন । প্রথম যেদিন প্রেমে পড়েছিলেন বৃদ্ধ , পনেরো বছরের এই সুন্দরীকে দেখে ; তারপর থেকে অন্য কারোর ওপর চোখ গেলেও মনের মানুষের জায়গা আর দেননি কাউকে । শুধু মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষটাকে রাগানোর জন্য অন্যান্য মেয়েদের কথা বলতেন , যেটা শুনে অভিমানে , রাগে সুন্দরীর ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে যেত কিংবা কোনো কোনো সময় চোখে জল চলে আসতো , যেটা দেখে স্থির থাকতে পারতেন না উনি । গলা ছাড়িয়ে হাসতে হাসতে , কাছে টেনে নিতে তার আদরের এই প্রেমিকাটিকে ]
— ” কিরে চোখ খুলবি না ? তাড়াতাড়ি খোল । দেরি হয়ে যাচ্ছে তো । “
[ বৃদ্ধা বিমর্ষ মুখে খুবই আলতোভাবে খুললেন দুই চোখ আর তারপরই চমকে গেলেন । একি ! কোথায় ডিভোর্স পেপার ? এ তো তার পছন্দের লাল গোলাপ । তবে কি তার মানুষটা গতকাল তার সঙ্গে মজা করছিলো ? আর কিছু ভাবতে পারেন না বৃদ্ধা , তার মধ্যে এতক্ষণ যে ভয়টা কাজ করছিলো , সেটাই আনন্দে পরিণত হয়ে চোখ দিয়ে জলের আকারে বেরিয়ে আসে ।
বৃদ্ধ হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন তার এই সুন্দরী প্রেমিকার সামনে । তারপর ফুলটা বাড়িয়ে দেন তার দিকে আর উন্মুক্ত কন্ঠে বলে ওঠেন , ]
— ” Happy 50th married anniversary to you my sweetest dreams girl , love u 3000 times , 50 বছর ধরে তো জ্বালাতন করলি ; কথায় কথায় প্রিয়া-দি , সুপর্ণা-দি — সবাইকে টেনে আনলি । আজকের দিনটা কিন্তু শুধু তোর আর আমার । আজ যেনো আবার কোনো দিদিকে টেনে আনিস না । বুঝলি রে পাগলি ! জীবনের শেষ দিনটাতেও তোর এই পাগলামি , অভিমান , ভালোবাসা — এসব দেখে আমি চোখ বুঝতে চাই । কিরে , আছিস তো আমার সঙ্গে ? “
[ বৃদ্ধার দু’চোখে তখন আনন্দের জল । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বৃদ্ধা বলে ওঠেন , ]
— ” থাকবো রে জানোয়ার , থাকবো । তুই সত্যিই আমায় কোনোদিনও একটু শান্তিতে থাকতে দিলিনা । যা যা , কোথায় যাবি বলছিলি না , চন্দননগর না কি আমেরিকা ! যেগে যা ।। “
— ” কি যে বলিস ! তোকে ছেড়ে যাবো কোথায় ? “
— ” কেনো , তোর সেই সুন্দরী অম্বিকা সেনগুপ্তর কাছে । “
— ” হুস পাগলী , আমি জানতাম তুই সেদিন ওখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলি । তাই তো মজা করে ফোনে কথা বলার অ্যাক্টিং করছিলাম । ওসব ‘অম্বিকা’ বলে কেউ নেই রে । তোকে জাস্ট একটু রাগাতে চেয়েছিলাম , যাতে তুই ভাবিস যে , আমাদের এই অ্যানিভার্সারির তারিখটা আমার মনে নেই । আর দেখ তাই হল …. হিহি……. “
— ” সত্যিই তুই জন্ম শয়তান । আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । অসভ্য ছেলে কোথাকার …. না না সরি , অসভ্য লোক কোথাকার ! “
— ” সে যাই বল , বয়সটা জাস্ট একটা নাম্বার । আমার কাছে তো তুই এখনো সেই পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়েটাই আছিস রে , আর আমি তোর সেই কলেজে পড়া বুবুন-দা । তাইতো রে খেপি ! “
— ” যাহ্ , তোর সঙ্গে একটাও কথা বলবো না । সব সময় রাগাবে , একটুও ভালোবাসে না আমায় । “
— ” আচ্ছা বাবা , ঠিক আছে । আর এতো অভিমান করতে হবে না । আজকের সারাদিনটা তোর সঙ্গে জমিয়ে উপভোগ করবো । সিনেমার টিকিট কাটাই আছে , দুপুরের খাবারটা গঙ্গার পাড়ে সেই সঞ্জুদার ভাতের হোটেলে বসে খাবো । ছেলেমেয়েদের নেমন্তন্ন করেই দিয়েছি , বিকেলের মধ্যেই সবাই এসে পড়বে হইহই করে । আর তারপর রাতে হবে গ্র্যান্ড ধামাকা । কিরে , এবার তো আর আমাকে ভুলোমনা বলবি না ? “
— ” উমম , সেসব তো ঠিকই আছে । আচ্ছা প্রিয়া-দি টা কে ? এর ব্যাপারে তো আগে শুনিনি । “
— ” ইয়ে মানে …. মনে পড়ছে না এখন……. কেউ হবে হয়তো বা …….. “
— ” এইতো এক্ষুনি বললি , তোর সবকিছু মনে থাকে ! “
— ” আরে , তোর আর আমার ব্যাপারে সব মনে থাকে । বাকিরা তো সবাই টেম্পোরারি , ওদের নিয়ে তাই তেমন কিছু মনেও রাখি না । “
— ” হুঁ হুঁ , আমাকে কি তুমি এখনো সেই বোকা মেয়েটা মনে করেছো ? আজকের দিনটা তোমার মনে আছে বলেই ছেড়ে দিলাম , নাহলে না মজা দেখিয়ে দিতাম । বুঝলে ? “
— ” ওহে দেবী , বুঝেছি সব । এবার এই ভক্তের ওপর একটু করুনা করুন । আপনার জন্য একখানা ‘স্পেশাল গিফট’ অর্ডার দিয়েছি ; সেটাও কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে । দয়া করে রাগ করবেন না । বড্ড ভয় খেয়ে আছি আমি । আপনি এবার আদর করে সেই ভয় থেকে আমায় মুক্তি দিন । “
— ” বাজে লোক একটা , খুব ভালোবাসি তোকে । কোনোদিন যদি বলিস যে অন্য কারোর উপর ক্রাশ খেয়েছিস , সেদিন তোর একদিন কি আমার একদিন ! “
— ” তথাস্তু দেবী । Love you Darling , love u so much . “
— ” Love you too ….. শয়তান লোক ! “
ভালোবাসার গল্প (Valobashar Golpo) | রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী
May 30, 2023 by maximios • Wishes
— ” আমার একটা কথাও তুই শুনিস না আজকাল । কিসের এত ব্যস্ত থাকিস যে ঠিক করে আমার সঙ্গে দুটো কথা বলার সময় পাস না ? গত পাঁচ দিন ধরে লক্ষ্য করছি , তুই যেন কিছু লুকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে ! সত্যি করে বলতো , অন্য কাউকে ভালো লেগে গেছে বুঝি ?! “
— ” হুস , তুই চুপ কর । তোদের মেয়েদের আর কোনো কাজ-বাজ নেই । সারাক্ষণ শুধু একটা ছেলেকে সন্দেহ আর সন্দেহ । আদৌ কোনোদিন ভালোবেসেছিলি আমায় ? “
— ” হ্যাঁ , এখন তো বলবিই এইকথা । তুই-ই তো আমার পিছনে ঘুরঘুর করতিস । তোকে পাত্তা দিতাম না ; তা সত্ত্বেও তুই আমার পিছন ছেড়েছিলি ? ছাড়িস নি । তার ওপর অবনী-দা , বাবাই-দা , টুবলু-দা — এরা যখন এদের ভালোবাসার কথা বলতে আসতো , তুই পরে তোর দলবল নিয়ে গিয়ে ওদের অবস্থা টাইট করে দিয়ে আসতিস যাতে ওরা আর আমার পিছনে না পড়ে । কেন , এইসব করার বেলা মনে ছিল না ?? “
— ” পাগল নাকি তুই ? ওরা তোকে ডিস্টার্ব করতো আর আমি ‘as a gentleman’ তোকে ওদের থেকে রক্ষা করতে যেতাম , বুঝলি ! “
— ” ওরে আমার জেন্টেলম্যান’ রে ! As a gentleman , আমাকে ওদের থেকে বাঁচানো আর একইসাথে ওপাড়ার তনু-দি , ক্লাস টুয়েলভ-এর রিম্পা , তোর থেকে দু বছরের বড়ো পৃথা-দি —- এদেরকে লাইন মারার বেলা মনে থাকে না , না ! “
— ” আরেহ ছি ছি ! এসব কি কথা বার্তা ? ওদের আমি সবসময়ই দিদি বা বোনের নজরে দেখে এসেছি । রাম-রাম ! তুই এত ভুলভাল ভাবিস কেন ? “
— ” হ্যাঁ রে , আমি তো ভুলভাল ভাবি । তাই জন্যে তোর কোটের পকেট থেকে সেবার পৃথা দি-কে ডেডিকেট করে লেখা লাভ লেটারটা খুঁজে পেলাম , যেটাতে পরে কি এক্সকিউজ দিলি যে , ওটাতে নাকি আমার নাম লিখতে গিয়ে ভুল করে পৃথা দি-র নাম লিখে দিয়েছিস । তোদের তো পেটে পেটে শয়তানি । “
— ” এখন তো বলবিই ওই সব । মনে আছে তোকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলাম , সারাজীবন আমায় ভালবাসবি তো ? তখন তো যৌবনের প্রারম্ভ , খুব মেতে উঠেছিলি । কত কথা … আহহা ! “
— ” এই …. এই । একদম মিথ্যে কথা বলবিনা । কি শয়তান রে তুই ! একবারও তুই এইভাবে কথা বলিস নি । তখন তো আমার সঙ্গে কথা বলতে গেলে যেন সারা রাজ্যের লজ্জা এসে তোর মুখে লুকিয়ে পড়তো । এসব ঢঙের কথা বলতে আসবি না আমায় , বুঝেছিস ! “
— ” মোটেও না , আমি ছিলাম পুরুষসিংহ । নিজের মুখে সব কথা বলতে হয় নাকি সব সময় ! মেয়েদেরও মাঝে মাঝে কিছু বুঝে নিতে হয় । তবেই না ‘পতিব্রতা সতি’ হতে পারবে । “
— ” হ্যাঁরে , আমরাই সারাজীবন ‘পতিব্রতা সতি’ হয়ে থাকি আর তোরা রিম্পা-দি , ঝিনুক-দি এদের পিছনে পড়ে থাক ; তাই তো ! “
— ” ছিঃ ছিঃ ! আমাদের কথার মধ্যিখানে আবার দিদিদের নিয়ে কেন টানাটানি ? ওরা দিদি হয় , বয়সে বড় , তাই …. “
” ………তাই ওদের লাইন মারাই যায় , কি বলিস ! “
— ” ছ্যা ছ্যা , এসব আমি ঘূণাক্ষরেও ভাবি না । তোর মতন এক সুন্দরী রমনী থাকতে অন্য কোনো মেয়ের দিকে আমি চোখ তুলেও তাকাই না । “
— ” তা বলছি , এটা তোর কত নম্বর ঢপ হলো ? “
— ” ঢপ ! কি যা তা বলছিস ? আমি কি কোনোদিনও তোর থেকে কিছু লুকিয়েছি ? “
— ” না না , কিচ্ছু লুকোস নি । সে জন্যেই তো গতমাসে তোর প্যান্টের গোপন পকেট থেকে ‘classic’ এর একখানা গোটা নতুন প্যাকেট বের করলাম । কি বললি , সেটা নাকি তোর অফিসের কলিগ ভুল করে তোর পকেটে ফেলে দিয়েছে ! “
— ” হ্যাঁ …. না মানে …. সে তো দিয়েছেই । ভুল করে করে ফেলেছিল বেচারা ….. “
— ” আচ্ছা , এক কাজ কর । তোর ওই কলিগের নাম্বারটা দে । আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করি যে এরকম ভুল সে আর কত জনের সঙ্গে করেছে ! “
— ” আরে বাবা , ছাড় না । এত দিনের পুরনো কথা সে কি আর মনে রাখবে ? ! “
— ” এমন কিছু বেশিদিন হয়নি কিন্তু , তুই চাইলেই আমি …… “
— ” না না , ছাড় না এসব কথা । পুরনো চাল ভাতে বাড়ে , পুরনো কথায় তর্ক বাড়ে । ওসব বাদ দে , তুই বল সামনে তো পুজো আসছে , শপিং-টপিং করতে বের হবি না নাকি ?! “
— ” বলিস কি রে ? তুই এই প্রশ্ন আমায় জিজ্ঞেস করছিস ? ওদিকে তোর রিম্পা-দি …… “
— ” তোর কি মুখে আর কোন কথা নেই এসব ছাড়া ? এত সন্দেহ করিস আমায় তুই ?! “
— ” না করে উপায় কি বল ! কাল রাতেই তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড শান্তনু চ্যাটার্জির সঙ্গে কথা বলছিলি আর জিজ্ঞেস করছিলি তোদের কলেজের এককালের সবচেয়ে সুন্দরী সেই অম্বিকা সেনগুপ্তের সঙ্গে আর যোগাযোগ আছে কিনা তার ?! তুইও নাকি বড্ড মিস করিস তাকে আজকাল । “
— ” ইয়ে মানে তোকে এসব কে বললো ? জানতাম … জানতাম ….. আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবেই । বিশ্বাস কর তুই , আমি …. “
— ” কাল যখন তোর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলিস ড্রইং রুমে বসে , আমি সেই অন্ধকারে আগে থেকেই সোফায় শুয়ে ছিলাম , তুই লক্ষ্য করিস নি । কিন্তু তোর কথা আমি সব শুনেছি স্পষ্ট , একেবারে আমার এই কান দিয়ে । “
— ” শেষপর্যন্ত তুইও না সন্দেহ করছিস ? তুই লুকিয়ে লুকিয়ে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিলি আমার ওপর ? এ যেন আমি ভাবতে পারছি না …. শেষ পর্যন্ত ঘর শত্রু বিভীষণ !? “
— ” আর বেশি ভাবিস না , কারণ বেশি ভাবতে চেষ্টা করলে এবার আমি লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দেব । বুঝতে পেরেছিস ! “
— ” হায় হায় , এ যে দেখি সর্ষের মধ্যে ভূত ! এবার আমার কি হবে গো ! বলি ও গিন্নি , তোমার এই বুড়ো কত্তাটাকে একটুও ভালোবাসো না , তাই না ! এ বুড়ো বয়সে আমি কোথায় যাবো গো ! ভাবছি বড়ো খোকাকে ফোন করে কাল-ই আমেরিকায় পাড়ি দেব আর নয়তো ছোটো খোকাকে ফোন করে মাদ্রাজ । “
— ” তারচেয়ে বরং মেজো মেয়ের বাড়ি চন্দননগর চলে যা কিংবা ছোটো মেয়েকে ফোন করে বল শান্তিনিকেতন থেকে তোকে নিতে আসতে । তারপর বাড়িতে আমি কয়েকটা দিন না হয় একটু শান্তিতে ঘুমাবো । “
— ” একি বললে গিন্নি ! আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে ? তোমার কষ্ট হবে না , না ! সে তুমি যাই বলো , As a gentleman আমি তোমাকে সারা জীবন আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলাম , আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো । “
— ” এই বুড়ো , আগে এটা বল সিগারেট না খাওয়ার প্রতিজ্ঞাটা কবে থেকে শুরু করবি ? হতভাগা , তুই এখনো সিগারেট ছাড়তে পারিসনি , তুই নাকি আবার নিজের দায়িত্ব পালন করবি ! বলি ঢং হচ্ছে , অ্যা ! বুড়ো বয়সে ভীমরতি । “
— ” এতটা নিষ্ঠুর তুমি হতে পারবে প্রিয়ে !? তুমিতো আমার জানের জান , পরানের পরান ; হিয়ার মাঝে কেবল তোমারই স্থান । জানি আমি , তুমি আমায় খুবই ভালোবাসো , কিন্তু কোনোদিনও বলো না কেন গো ?! “
— ” তোকে আমি ভালোবাসি ? এটা কে বললো ? অন্য কেউ আছে আমার ভালোবাসার । “
— ” বলিস কি ? আমাকে ছেড়ে দিবি তুই ! “
— ” না দিয়ে উপায় কি বল ! কোনোদিন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তারিখ মনে রেখেছিস ? রাখিস নি । আমার জন্মদিনটা তো ভুলেই গিয়েছিস । সে না হয় বাদ দিলাম , কিন্তু না , আর সহ্য হচ্ছে না । “
— ” বেশ বেশ ! আমিও ভাবছিলাম কয়েকদিন ধরে তোকে কথাটা বলবো কিন্তু কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না …. “
— ” কি কথা ?! “
— ” এই যে , আমার প্রাক্তন প্রেমিকা ফিরে এসেছে আর আমি ওকে বিয়ে করতে চাই । তবে তার জন্য আগে তোর থেকে ডিভোর্স নিতে হবে , কিন্তু তুই রাজি হবি না হয়তো ; তাই আগেভাগে এমন কিছু করছিলাম যাতে নিজে থেকেই তুই এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিস আর আমিও তোর থেকে মুক্তি পাই । “
— ” বাহ্ , এইতো তুই জেন্টেলম্যান , তাই না ! বুঝলাম… বুঝলাম… তোদের ভালোবাসা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্পূরের মতো উবে যায় । বেশ এতদিন তোর খেয়াল রেখেছিলাম , ভালোবেসেছিলাম , কিন্তু তুই তো ………. আচ্ছা বাদ দে । কিছু কি বলবি তুই আর ? “
— ” উমম , এটাই বলার যে ডিভোর্স পেপার রেডি , আমার সই করা হয়ে গেছে । কাল সকালে শেষবারের মতো না হয় তোর সঙ্গে আমার দেখা হবে । তোকে দেওয়া পছন্দের শাড়িখানা পড়ে নিস , ভালো লাগে তোকে । “
— ” সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না । ডিভোর্স চেয়েছিস , কাল-ই না হয় তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো । তোর পছন্দের মাটন বিরিয়ানি করেছিলাম , ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি , খেয়ে নিস । আমার খিদে নেই , আমি শুতে চললাম । তার ওপর আবার প্যাকিং করতে হবে জামাকাপড়ের । সবকিছু নেব না রে , কয়েকটা শাড়ি-ই যথেষ্ট আমার জন্য । ভাবছি বড়ো মেয়ের বাড়ি চলে যাবো , সেখান থেকে না হয় দেখা যাক কোথায় যাই । তুই খেয়াল রাখিস নিজের , বুঝলি ! গুড নাইট । “
— ” হুমম , শুভ রাত্রি । “
[ পরদিন সকাল বেলায় দুজনের দেখা হয় বাড়ির সামনের সেই ছোট্ট বাগানটাতে , যেটা একসময় দুজনে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলো ।
একজনের পরনে নীল রঙের একখানা শাড়ি , যেটা তার ভালোবাসার মানুষটা তার জন্মদিনে তাকে উপহার দিয়েছিলো ।
আর তার উল্টো দিকের মানুষটা ! সে ততক্ষণে একখানা হাত পিছনে রেখে এক পা , এক পা করে এগিয়ে আসে তার জীবন সঙ্গিনীর দিকে ।
জল টলমল চোখে বৃদ্ধা তাকান তার এতো বছর ধরে প্রত্যেকটা হাসি-কান্নার মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকা মানুষটার দিকে । তাকিয়ে দেখেন মানুষটার ঠোঁটে স্মিত হাসি ।
তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধানটা আর মাত্র দুই হাত । বৃদ্ধা ভয়ে চোখ বুঝে নেন । এই কঠিন বাস্তব যে উনি সহ্য করতে পারবেন না । এরকম চিন্তা ভাবনা তো তার মাথাতেই আসেনি কোনোদিন । এরকম কিছু ঘটতে পারে এটা তিনি আঁচ-ই করতে পারেননি ।
বৃদ্ধ চুপচাপ তাকিয়ে থাকেন তার পঁয়ষট্টি বছরের এই সুন্দরী জীবন সঙ্গিনীর দিকে । নীল রঙের শাড়িতে বড্ড মানাচ্ছে তাকে । চোখ ফেরানো যাচ্ছে না । এই বুড়ো বয়সে যেনো তিনি নতুন করে প্রেমে পড়ছেন । পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ তাঁর মনের মানুষটির দিকে ।
বৃদ্ধার চোখ বুজে গিয়েছে । তিনি চিন্তা করছেন , কখন তার ভালোবাসার মানুষটা তার সঙ্গে সম্পর্কের শেষ চিহ্নটা বের করে দেবে ! বুকটা ভয়ে ঢিপঢিপ করছে ।
বৃদ্ধ আলতো হাসলেন , তারপর পিছনে রাখা হাতখানা সামনে আনলেন । হাতে ধরা একখানা লাল রঙের গোলাপ ।
এই গোলাপ তার আর তার ভালোবাসার মানুষের অদ্ভুত এক বন্ধন । প্রথম যেদিন প্রেমে পড়েছিলেন বৃদ্ধ , পনেরো বছরের এই সুন্দরীকে দেখে ; তারপর থেকে অন্য কারোর ওপর চোখ গেলেও মনের মানুষের জায়গা আর দেননি কাউকে । শুধু মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষটাকে রাগানোর জন্য অন্যান্য মেয়েদের কথা বলতেন , যেটা শুনে অভিমানে , রাগে সুন্দরীর ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে যেত কিংবা কোনো কোনো সময় চোখে জল চলে আসতো , যেটা দেখে স্থির থাকতে পারতেন না উনি । গলা ছাড়িয়ে হাসতে হাসতে , কাছে টেনে নিতে তার আদরের এই প্রেমিকাটিকে ]
— ” কিরে চোখ খুলবি না ? তাড়াতাড়ি খোল । দেরি হয়ে যাচ্ছে তো । “
[ বৃদ্ধা বিমর্ষ মুখে খুবই আলতোভাবে খুললেন দুই চোখ আর তারপরই চমকে গেলেন । একি ! কোথায় ডিভোর্স পেপার ? এ তো তার পছন্দের লাল গোলাপ । তবে কি তার মানুষটা গতকাল তার সঙ্গে মজা করছিলো ? আর কিছু ভাবতে পারেন না বৃদ্ধা , তার মধ্যে এতক্ষণ যে ভয়টা কাজ করছিলো , সেটাই আনন্দে পরিণত হয়ে চোখ দিয়ে জলের আকারে বেরিয়ে আসে ।
বৃদ্ধ হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন তার এই সুন্দরী প্রেমিকার সামনে । তারপর ফুলটা বাড়িয়ে দেন তার দিকে আর উন্মুক্ত কন্ঠে বলে ওঠেন , ]
— ” Happy 50th married anniversary to you my sweetest dreams girl , love u 3000 times , 50 বছর ধরে তো জ্বালাতন করলি ; কথায় কথায় প্রিয়া-দি , সুপর্ণা-দি — সবাইকে টেনে আনলি । আজকের দিনটা কিন্তু শুধু তোর আর আমার । আজ যেনো আবার কোনো দিদিকে টেনে আনিস না । বুঝলি রে পাগলি ! জীবনের শেষ দিনটাতেও তোর এই পাগলামি , অভিমান , ভালোবাসা — এসব দেখে আমি চোখ বুঝতে চাই । কিরে , আছিস তো আমার সঙ্গে ? “
[ বৃদ্ধার দু’চোখে তখন আনন্দের জল । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বৃদ্ধা বলে ওঠেন , ]
— ” থাকবো রে জানোয়ার , থাকবো । তুই সত্যিই আমায় কোনোদিনও একটু শান্তিতে থাকতে দিলিনা । যা যা , কোথায় যাবি বলছিলি না , চন্দননগর না কি আমেরিকা ! যেগে যা ।। “
— ” কি যে বলিস ! তোকে ছেড়ে যাবো কোথায় ? “
— ” কেনো , তোর সেই সুন্দরী অম্বিকা সেনগুপ্তর কাছে । “
— ” হুস পাগলী , আমি জানতাম তুই সেদিন ওখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলি । তাই তো মজা করে ফোনে কথা বলার অ্যাক্টিং করছিলাম । ওসব ‘অম্বিকা’ বলে কেউ নেই রে । তোকে জাস্ট একটু রাগাতে চেয়েছিলাম , যাতে তুই ভাবিস যে , আমাদের এই অ্যানিভার্সারির তারিখটা আমার মনে নেই । আর দেখ তাই হল …. হিহি……. “
— ” সত্যিই তুই জন্ম শয়তান । আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । অসভ্য ছেলে কোথাকার …. না না সরি , অসভ্য লোক কোথাকার ! “
— ” সে যাই বল , বয়সটা জাস্ট একটা নাম্বার । আমার কাছে তো তুই এখনো সেই পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়েটাই আছিস রে , আর আমি তোর সেই কলেজে পড়া বুবুন-দা । তাইতো রে খেপি ! “
— ” যাহ্ , তোর সঙ্গে একটাও কথা বলবো না । সব সময় রাগাবে , একটুও ভালোবাসে না আমায় । “
— ” আচ্ছা বাবা , ঠিক আছে । আর এতো অভিমান করতে হবে না । আজকের সারাদিনটা তোর সঙ্গে জমিয়ে উপভোগ করবো । সিনেমার টিকিট কাটাই আছে , দুপুরের খাবারটা গঙ্গার পাড়ে সেই সঞ্জুদার ভাতের হোটেলে বসে খাবো । ছেলেমেয়েদের নেমন্তন্ন করেই দিয়েছি , বিকেলের মধ্যেই সবাই এসে পড়বে হইহই করে । আর তারপর রাতে হবে গ্র্যান্ড ধামাকা । কিরে , এবার তো আর আমাকে ভুলোমনা বলবি না ? “
— ” উমম , সেসব তো ঠিকই আছে । আচ্ছা প্রিয়া-দি টা কে ? এর ব্যাপারে তো আগে শুনিনি । “
— ” ইয়ে মানে …. মনে পড়ছে না এখন……. কেউ হবে হয়তো বা …….. “
— ” এইতো এক্ষুনি বললি , তোর সবকিছু মনে থাকে ! “
— ” আরে , তোর আর আমার ব্যাপারে সব মনে থাকে । বাকিরা তো সবাই টেম্পোরারি , ওদের নিয়ে তাই তেমন কিছু মনেও রাখি না । “
— ” হুঁ হুঁ , আমাকে কি তুমি এখনো সেই বোকা মেয়েটা মনে করেছো ? আজকের দিনটা তোমার মনে আছে বলেই ছেড়ে দিলাম , নাহলে না মজা দেখিয়ে দিতাম । বুঝলে ? “
— ” ওহে দেবী , বুঝেছি সব । এবার এই ভক্তের ওপর একটু করুনা করুন । আপনার জন্য একখানা ‘স্পেশাল গিফট’ অর্ডার দিয়েছি ; সেটাও কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে । দয়া করে রাগ করবেন না । বড্ড ভয় খেয়ে আছি আমি । আপনি এবার আদর করে সেই ভয় থেকে আমায় মুক্তি দিন । “
— ” বাজে লোক একটা , খুব ভালোবাসি তোকে । কোনোদিন যদি বলিস যে অন্য কারোর উপর ক্রাশ খেয়েছিস , সেদিন তোর একদিন কি আমার একদিন ! “
— ” তথাস্তু দেবী । Love you Darling , love u so much . “
— ” Love you too ….. শয়তান লোক ! “